সংসদে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করলেন লতিফ সিদ্দিকী

Awamileague Times
By Awamileague Times সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫ ২৩:৪৬

সংসদে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করলেন লতিফ সিদ্দিকী

সংসদে টানা ২০ মিনিটের বক্তৃতায় জাতির উদ্দেশে ক্ষমা চেয়ে সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার ঘোষণা দিলেন বিতর্কিত সংসদ সদস্য ও সাবেক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। বক্তব্যের শুরুতে নিজেকে সাচ্চা মুসলমান বলে দাবি করেন লতিফ সিদ্দিকী। এসময় আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন,’ আমি মুসলমান, আমি বাঙালি, আমি আওয়ামী লীগার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি, মানুষকে ভালোবেসেছি। আমি অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছি। আজ আমার সমাপ্তির দিন। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই। যদি কারো মনে আঘাত দিয়ে থাকি তাহলে আমি দেশবাসীর কাছে নতমস্তকে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’ পরে স্পিকারের কাছে তিনি তার পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেন।

09012015_09_LATIF_SIDDIQUE

এর আগে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশ করেন তিনি। এরপর সরাসরি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কক্ষে প্রবেশ করে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। তবে এ সময় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন না।

লতিফ সিদ্দিকীর সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্পিকার শিরীন শারমিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,’লতিফ সিদ্দিকী তার সঙ্গে দেখা করেছেন। যেহেতু তিনি এখনও সংসদ সদস্য তাই তার সংসদে দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনও বাধা নেই।’

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে গিয়ে সেখানে একটি অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলিগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। এঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে এবং তার বিচারের দাবিতে ইসলামপন্থী দলগুলো আন্দোলন শুরু করে। তবে নিজের বক্তব্যে অনড় থাকেন লতিফ সিদ্দিকী। এ নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে এ ঘোষণা কার্যকর করা হয়। তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। এসময় তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার একাধিক মামলা দায়ের হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। লতিফের বিরুদ্ধে ইসলামি দলগুলোর আন্দোলনের মধ্যেই তিনি দেশে ফেরেন এবং তাকে ধর্ম অবমাননার মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় জামিন নামঞ্জুর হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২৬ মে সাত মামলায় ছয় মাসের জন্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। এরপর ২৯ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য। সপ্তাহ খানেক আগে সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন বিতর্কিত এই সংসদ সদস্য। তবে কবে করবেন সে সম্পর্কে আগাম কোনও তথ্য এর আগে গণমাধ্যমকে জানাননি বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।

সংসদে লতিফ সিদ্দিকীর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য-

আমি মুসলমান, আমি বাঙালি, আমি আওয়ামী লীগার- এ পরিচয় মুছে দেওয়ার মতো কোনও শক্তি পৃথিবীর কারো নেই- কারণ এ আমার চেতনা, আমার জীবনবোধ-প্রাণের রসদ, চলার সুনির্দিষ্ট পথ।

যে যাই বলুন, প্রচার করুণ, সিদ্ধান্ত নিন- এর ব্যতিক্রম কিছুই ঘটেবে না। আমি মানুষ বলেই আমার ভুল-ভ্রান্তি আছে, ত্রুটি আছে, কিন্তু মনুষ্যত্বের স্খলন নেই, মানবতার প্রতি বিশ্বাস হারাই না, যতো বড় আঘাতই আসুক ধৈর্যহারা হই না; আমি বিশ্বাস করি আঁধার মানেই আলোর হাতছানি। রাষ্ট্র-নিপীড়ন করলো, আমি ধৈর্য ও সহনশীলনতার সঙ্গে মেনে নিয়ে তা মোকাবিলা করলাম। অভিযোগের টুকরি মাথা নিয়ে সংসদে দাঁড়াইনি, ভালোবাসার মহিমা বিতরণ করতে সৌহার্দ্য ও প্রীতির ডালা সাজিয়ে নিয়ে এসেছি।

আমি সব সময়ই অস্পষ্টতা ও ধূসরতা বিরোধী; শঠতা, কপটতা, স্বার্থপরতা ও সুযোগ-সুবিধার পথে-হাঁটা অপছন্দ করি। জীবন উৎসর্গ করেছিলাম মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতার সেবায়- নিজের জন্য ভারী ভারী পদ-পদবী আয়ত্ব করতে নয়। আর পদ-পদবির জন্য নিজের চরিত্র-বৈশিষ্ট্যকে কলুষিত ও কালিমালিপ্ত করা আমার স্বভাববিরুদ্ধ- কুহকের পথ আমার নয়- আলোর পথে যাত্রী আমি। মানুষকেও আলোর পথে চালিত করাই আমার জীবনধর্ম। অসাম্প্রদায়িক-ইহজাগতিক-গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দ্বারা আমার মনন গঠিত ও বিকশিত এবং প্রতিনিয়ত এর চর্চা ও অনুশীলন করি। অমানুষ নই- প্রথম আমি মানুষ, মনুষ্যত্ব, মানবতার চর্চা ও অনুশীলন করতে গিয়ে নিজের ভেতরে অনেকগুলো কুঠুরি নির্মাণ করেছি। মানুষ ও মনুষ্যত্বের অনুশীলনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কুঠুরিতে প্রবেশ করি। সেই কুঠুরির একটা আমার ধর্মকুঠুরি। সেখানে আমি সাচ্চা মুসলমান। ধর্মীয় জীবন একান্তই আমার। এই জীবনধারা নিয়ে জন-বাহাবা বা নিন্দা কোনওটাতে কুণ্ঠিত, বিব্রত ও ভীত-সন্ত্রস্ত হই না। নিজের কাছে নিজেই জবাবদিহি করেই সন্তুষ্ট। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমার ধর্মকুঠুরির ভাবজগৎ নিয়ে সমষ্টিতে আলোড়ন-আন্দোলন দেখা দিয়েছে, সমষ্টি আমাকে ত্যাজ্য ও ব্রাত্য করেছে।

যেভাবেই ভাবা যাক, রাজনীতি সামষ্টিক, কোনওক্রমেই ব্যষ্টিক বা স্বতন্ত্র অবস্থান স্বীকার করে না- কারণ রাজনীতি মানবকল্যাণের একটা প্রকৃষ্ট উপায়। কোনও বিচ্ছিন্ন উপায় নয়। অন্যদিকে ব্যক্তিজীবন একান্তই ব্যক্তির; এখানে সমষ্টির প্রবেশ নিষিদ্ধ, ব্যক্তিই এখানে সবকিছু। আমাকে ষড়যন্ত্রকারী, প্রতিশোধপরায়ণ, ধর্মদ্রোহী, গণদুশমন ও শয়তানের রিপ্রেজেন্টেটিভ- এহেন ঘৃণার পাত্র সাজাতে সবশেষে ধর্মকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। আমি স্পষ্ট করে দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই, ‘আমি ধর্মবিরোধী নই-আমি ধর্মানুরাগী, একনিষ্ঠ সাচ্চা মুসলমান।’ আমি বলতে সাহস পাই ধর্মীয় অনুশাসনের নামে যে সকল গর্হিত কাজ ধর্মান্ধ-ধর্মবেপারী ও মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী যান্ত্রিকভাবে স্বীর স্বার্থ-চরিতার্থ করতে তৎপর তাদের বিরুদ্ধে শান্তির ধর্ম, ন্যায়ের ধর্ম, সত্যের ধর্ম, অন্ধকার থেকে আলোর পথে দিশার ধর্ম ইসলামের সঠিক তাৎপর্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে অম্লান থাকবে আমার পথ চলা। আমার এই মনোভঙ্গির ও ভাবজগতের প্রকাশ ও প্রচার নিয়ে যত ষড়যন্ত্রই হোক, যত মিথ্যাচার হোক, যত আঘাত-প্রতিঘাত আসুক, রাজনৈতিক সংগ্রাম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আস্থা রেখে যেমন মোকাবেলা করেছি, বর্তমানেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। তবে এখন আমি নেতাহীন কি না সেই বিষয়ে সন্দিহান (!)

আমি মনে করি, হজ প্রতিপালন ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে অন্যতম ফরজ। এই ফরজ পালনেরও আরও কতগুলো অবশ্যপালনীয় ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিপালন করে মাত্র একবারই করার কথা যা আমি নিজেও করেছি। ওয়াজিব-সুন্নত পরিহার করে, অন্যান্য অবশ্যপালনীয় ফরজ তরক করে যারা এই ফরজটি পালনে প্রতিবছর ব্যস্ত তাদের মানসিকতা আর আমার বিবেচনা ভিন্ন। হজ যে একটা বিরাট অর্থনীতিক ক্রিয়াকাণ্ড তা কিন্তু মানতে না চাইলেও মিথ্যে হয়ে যায় না । রোজার মাসটি আমার প্রাত্যহিক জীবনের খুবই স্মরণীয় ও অবশ্যপালনীয় মাস। সম্পূর্ণ পবিত্রতার সঙ্গেই আমি এই ধর্মীয় আচারটি পালন করি। এই ক্ষেত্রে শঠতা, কপটতা, ভান-ভনিতা কোনওটাই আমাকে গ্রাস করে না। শঠতা-কপটতা নতুন শঠতা-কপটতা জন্ম দেয় বলে আমার প্রত্যয়।

মহানবী আল্লাহর প্রেরিত প্রতিনিধি, বিশ্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক-শূন্য থেকে একক প্রচেষ্টায় রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনে দক্ষ সফল রাষ্ট্রনায়ক; আমার চলার পথে আলোকবর্তিকা। আদর-ভালোবাসা-শ্রদ্ধা ও সম্মানে নিজের বুকে আবদুল্লাপুত্র মুহাম্মদ বলে আদর প্রকাশে কুণ্ঠিত, ভীত বা শঙ্কিত নই! এই দুর্লভ মানবজীবন, সামনে মহানবীর আদর্শিক পথ চলার নির্দেশনা থাকার পরও কী মহত্ত্বের আকাঙ্ক্ষা ও সুন্দরের আরাধনা মনে জাগবে না! আমি তো নর্দমার কীট-দুর্বল-ক্ষুদ্র-নিকৃষ্ট কীটানুকীট নই।

যতবার বলতে বলা হবে, ততবার বলবো তবলিগকারীরা যদি ধর্মপ্রচারের সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্র চেতনা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী হতেন তাহলে তবলিগের যে প্রভাব আমাদের সমাজ-জীবনে প্রতিফলিত তা আরও ফলবতী ও কার্যকর ভূমিকা রাখতো। নবী করিম (সা.) কখনও জীবনকে অস্বীকার করে ধর্মপালন করতে বলেননি। জীবনের জন্য ধর্ম অপরিহার্য- ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বিদায় হজের বাণীতে মহানবী নিষেধ করেছেন। যারা অসাম্প্রদায়িক ইহজাগতিক কথা প্রচার করেও ধর্মানুভূতি নিয়ে শোরগোল তোলেন তাদের বিষয়ে নীরব থাকাই সমীচীন মনে করি। মহত্ত্বের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া আমার কোনও আকাঙ্ক্ষা নেই, মহিমাহীন মনুষ্যত্বের চর্চায় কোনওকিছু বিকশিত হয় না। আমি আনন্দ-বেদনাকে একই সান্ত্বনায় গ্রহণ করি বলেই জীবনের কঠিনতম পরীক্ষায় দিশেহারা হই না, হই না পথভ্রষ্ট-এর উন্মোচন করে সঠিক আকাঙ্ক্ষার জানান দেয়। দুর্ভাগ্যের মধ্যেই সৌভাগ্যের বীজ নিহিত, আবার সৌভাগ্যের মধ্যেও অবস্থান দুর্ভাগ্যের অঙ্কুর। উত্থানের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থানে অর্থ অনিবার্য পতনের সম্ভাবনায় নিজেকে সমর্পণ করা।

সবার আগে নির্ণয় করতে হবে রাজনীতি-সংস্কৃতিটা কী হবে। এ না করে উন্নয়নের মাত্রা যতো বাড়বে-সন্ত্রাস, অস্থিরতা, টেন্ডারবাজি, সমাজ-রাজনীতিতে হানাহানি ততই বৃদ্ধি পাবে। যেখানেই রুটি-রুজি, আয়-ইনকাম সেখানেই ভাগ্যান্বেষী, জীবন-জীবিকান্বেষীদের ভিড় বাড়ে। সুযোগের চেয়ে চাহিদা-প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হলে মারামারি, খুনোখুনি হবেই। যদি রাজনীতি-সংস্কৃতি সুস্থিত করা না যায়, তবে ২০১৮ সালে দারিদ্র্য দূর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। আসলে অপেক্ষা করতে হবে ২০৪১ সাল পর্যন্ত। যতোক্ষণ আমরা উন্নত অর্থ-সামর্থ্যের দেশ না হবো। কারণ খুবই সহজ, ব্যাখ্যা খুবই সরল। দারিদ্র্য দূর হওয়ার পর বিত্তশালী হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এ প্রতিযোগিতা কি যে ভয়ঙ্কর হবে তা অনুমান করা বড়ই কঠিন। রীতিমতো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রযুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যাবে। অস্ত্র কেনার অর্থ সবার কাছেই থাকবে। তাই বলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান্তরালে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও চৈতন্যিক উন্নয়ন-ধারা পরিচালন করতে হবে। পণ্ডিতি কিংবা ভয় দেখাতে এসব বলছি না, ইতিহাসের সাক্ষ্য তুলে ধরছি মাত্র।

যা কখনোই বলতে চাইনি, আজকে তা বলতে চাই। আজকে আমার এই অবস্থান কুসুমাস্তীর্ণ পথ বেয়ে ঘটেনি, অনেক চড়াই-উৎরাই ভাঙতে হয়েছে। এমন বহিষ্কারের খড়গ এবারই প্রথম নয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারবার বহিষ্কার হতে হয়েছে-নকল করার দায়ে, শিক্ষক নাজেহাল ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নয়-বাঙালির আত্মপরিচয়ের সরব ঘোষণার কারণে। দল থেকে অতীতে দুইবার বহিষ্কারের খড়গ আমার গর্দানে পড়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা দুর্নীতিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জনের অভিযোগে নয়। দলীয় কর্মকাণ্ড ও দুর্বল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি বলে। এবারও কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক ইহজাগতিক মনোভাব প্রকাশের কারণেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার, মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ, প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ হরণ করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কতখানি যৌক্তিক সে বিচার অনাগত কালগর্ভে রেখে বলতে চাই, খুব দূর নয় অতীত নয়, নিকট অতীতে প্রয়াত মো. হানিফ যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক’ নীতি-আদর্শ বাদ দিতে ওকালতি করেন তখন তার এই তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। তখন ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ ওঠেনি, কারণ দল তখন ক্ষমতায় ছিল না, দলের অবস্থা এমন রমরমা ছিল না। হতাশাগ্রস্ত দলছুটরা তখনো আওয়ামী লীগ দলের নেতৃত্ব কুক্ষিগত করলেও এতো বলবান ছিল না। নিজ দল ত্যাগ করে কোনও রাজনৈতিক কর্মী যখন ক্ষমতাবাদী দলে যোগ দেয় তখন সে ক্ষমতা ছাড়া আর কি চাইতে পারে? আর সেই চাওয়া কোনও দোষ দেখি না। ক্ষমতা করায়ত্ব করার জন্যই তো দল ত্যাগ, আদর্শ ত্যাগ, নীতি জলাঞ্জলি।

আমার যত আপত্তি তা হলো সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ৪ দফা উল্লেখ করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে মাননীয় স্পিকার প্রেরিত চিঠিটি সম্পর্কে। ৬৬ অনুচ্ছেদের ৪ দফায় বর্ণিত নির্দেশনা হলো কোনও ব্যক্তির সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়া যোগ্যতা ও থাকা বিষয়ক। এক্ষেত্রে অনুচ্ছেদের ২ দফা এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের নির্দেশনার ব্যাপারটি স্পষ্ট। এই স্পষ্ট বিষয়টি মাননীয় স্পিকারের বরাতে অস্পষ্ট ও ধূসর হয়ে গেছে। আমি বিবেচনা করি, মাননীয় স্পিকারের চিঠিতে সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন ও সংবিধানের অপব্যাখ্যা হয়েছে। মাননীয় স্পিকার বিনা শুনানিতে এভাবে সংসদ সদস্যের আসন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া যথাযথ কি না সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়।

উপরন্তু, অনুমিত হয়েছে আমার নেতার অভিপ্রায়- আমি আর সংসদ সদস্য না থাকি। কর্মী হিসেবে নিয়ত নেতার একান্ত অনুগত ছিলাম। বহিষ্কৃত হওয়ার পর এ ব্যত্যয় কিংবা ব্যতিক্রম সমীচীন মনে করি না। ইতোপূর্বে আমার প্রতিবাদ ছিল প্রতিকার পাওয়ার, এখন দ্বিধাহীন কণ্ঠে কারও বিরুদ্ধে কোনও ঘৃণা-বিদ্বেষ উগরে না দিয়ে কোনও অভিযোগ উত্থাপন না করে হৃষ্টচিত্তে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের আসন ১৩৩, টাঙ্গাইল-৪ সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছি।

Awamileague Times
By Awamileague Times সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫ ২৩:৪৬
01212016_11_ALBD_CONSTITUTION

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner