স্বাধীনতার মার্চ মাসের বিজয় ওমানকে ৫৪ রানে হারিয়ে সুপার টেনে বাংলাদেশ
Related Articles
তৈয়বুর রহমান টনিঃ
রোববার ধর্মশালায় ওমানের বিরুদ্ধে রেকর্ডময় ছিলেন তামিম ইকবাল।বৃষ্টির শঙ্কা ছিল; তা সত্যিও হলো। মেঘের গর্জন শোনা গেল, আকাশে চমকাল বিদ্যুৎ। তবু হাসল বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ব্যাটেও যে ছিল ঝলকানি!টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতরানের রেকর্ড গড়েছেন তারকা টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। দেশের হয়ে ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই এখন শতকের মালিক এই টাইগার ক্রিকেটার
শুরুতেই দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
শেষ এসে ৬০ বলে ১০১ রান তুলে নিয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতরানের রেকর্ড গড়েন সদ্য বাবা হওয়া তামিম। শেষ পর্যন্ত তামিম অপরাজিত ছিলেন ১০৩ রানে। তিনি ৬৩ বলের এই টর্নেডো ইনিংস সাজান ৫টি ছক্কা ও ১০টি চারে। এখন তিন ধরনের ক্রিকেট- টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে দেশের সর্বোচ্চ রান তামিমের। তিন ফরম্যাটেই দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসও তারই।
৪২ টেস্টে তামিমের রান ৩ হাজার ১১৮। এই সংস্করণে তার সর্বোচ্চ ২০৬। ১৫৩ ওয়ানডেতে তামিমের রান ৪ হাজার ৭১৩। এই ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ১৫৪। আর ৪৯ টি-২০তে তামিমের সংগ্রহ ১০৯২ রান। এই সংস্করণে তার সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০৩ রান।
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৩ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭ রানের দুটি চমৎকার ইনিংস উপহার দেন তামিম। আজ এই আসরে প্রথম শতক তুলে নেন তিনি।তামিমের তাণ্ডবে ওমানের সামনে ১৮০ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার পরই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশই উঠছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনে।
তবুও আনুষ্ঠানিকভাবে তো বাংলাদেশের নাম সুপার টেনে লিখে দেওয়া যাচ্ছিল না। ওমান ২০ ওভার না খেলা পর্যন্ত।যদিও আরব দেশটি ব্যাট করতে নামার পর কয়েক বার বৃষ্টি হানা দেয়। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে বাংলাদেশের জয় এলো ৫৪ রানে। ডি/এল মেথডেই নির্ধারিত হলো জয়ের ব্যবধান। প্রথম দফা বৃষ্টির আগে ৭ ওভারে ৪১ রান করেছিল ওমান। বৃষ্টি থামলে ১৬ ওভারে ১৫২ রান নির্ধারণ করা হয় ওমানের জন্য; কিন্তু দ্বিতীয় দফা ব্যাট করতে নেমে ১.২ ওভার খেলার পর আবারো নামে বৃষ্টি।
প্রায় ১০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আবারো খেলা শুরু হয়। এবার নির্ধারণ করা হলো ১২ ওভারে ওমানকে করতে হবে ১২০ রান। অনেক বড় লক্ষ্য, চেষ্টা করতে তো দোষ নেই। এ কারণে ওমানের ব্যাটসম্যানরা চোক-কান বন্ধ করেই যেন ব্যাট চালানো শুরু করে দিয়েছিল। ফলে সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিতে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে তারা। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৬৫ রানে গিয়ে থামে ওমানের ইনিংস। সাকিব আল হাসান ১৫ রান দিয়ে একাই ৪ উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মাশরাফি, তাসকিন এবং আল আমিন।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর ভর করে ১৮০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জণ করলেন তিনি।
শুধু তাই নয়, তামিমই প্রথম এবং একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তামিম অপরাজিত থাকলেন ৬৩ বলে ১০৩ রানে। ১০টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৫টি ছক্কার মারও মারেন তিনি। তামিমের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে ছিলেন সাব্বির রহমান। ২৬ বলে তিনি করেন ৪৪ রান। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কা। সাকিব ৯ বলে করেন ১৭ রান। সৌম্য করেন ১২ রান।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ১৮১ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে ওমান। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তাসকিন আহমেদ ফিরিয়ে দেন জিসান মাকসুদকে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দি হন ওমানের ওপেনার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে আল আমিন ফেরান ৮ রান করা খাওয়ার আলিকে। রান আউট হয়ে ফেরেন ১৩ বলে ১৩ রান করা আদনান ইলিয়াস।
ইনিংসের নবম ওভারে সাকিবের বলে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন আমির কলিম। একই ওভারে স্ট্যাম্পিং হন আমির আলিও। দশম ওভারে মাশরাফি ফিরিয়ে দেন ২৫ রান করা জাতিন্দির সিংকে। আবারো বোলিংয়ে এসে সাকিব নিজের তৃতীয় উইকেটটি তুলে নেন। মেহরান খান সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। একই ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান হয়ে আসা সুলতান আহমেদকেও ফেরান সাকিব। এবং শেষ ওভারে সাব্বির নেন লালচেতার উইকেটটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮০/২ (তামিম ১০৩*, সৌম্য ১২, সাব্বির ৪৪, সাকিব ১৭*; খাওয়ার ১/২৪, লালচিতা ১/৩৫)
ওমান: ১২ ওভারে ৬৫/৯ (মাকসুদ ০, খাওয়ার ৮, জাতিন্দর ২৫, আদনান ১৩, কালিম ০, আমির ৪, মেহরান ৩, সুলতান ১, লালচিতা ১, আনসারি ৩*, বিলাল ১*; সাকিব ৪/১৫, সাব্বির ১/৫ তাসকিন ১/৮, মাশরাফি ১/১০, আল আমিন ১/১০)।
ফল: বাংলাদেশ ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৫৪ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল