আমেরিকানদের পাশাপাশি বাংলাদেশীরাও ঐতিহাসিক “থ্যাঙ্কস গিভিং ডে”- পালন করলো

Awamileague Times
By Awamileague Times নভেম্বর ২৬, ২০১৬ ০৫:০০

আমেরিকানদের পাশাপাশি বাংলাদেশীরাও ঐতিহাসিক “থ্যাঙ্কস গিভিং ডে”- পালন করলো

তৈয়বুর রহমান টনি নিউ ইয়র্কঃ-

বছর ঘুরে আবার এলো থ্যাংক্স গিভিংস ডে। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে ধর্মীয় ও একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। কিন্তু বর্তমানে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ অনুষ্টানে পরিণত হয়েছে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমেরিকা সর্বত্র সবধরনের মানুষ এই দিনটি সাধ্য অনুযায়ী পালন করে থাকে। থ্যাংকস গিভিং ডে-কে অনেকে আবার দ্য টার্কি ডেও বলে থাকে।

বরাবরের ন্যায় এবারও উৎসব-আমেজে যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিং ডে পালিত হয়েছে। দেশটিতে নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার দিবসটি পালিত হয়। আনন্দ ভ্রমণ, নৈশভোজ ও মূল্য ছাড়ে বিপুল পরিমাণ পণ্য কেনার মধ্য দিয়ে গতকাল দিবসটি পালন করা হয়েছে।

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে তাঁর মেয়াদের শেষ থ্যাংকস গিভিং ডে পালন করছেন পারিবারিকভাবে। তবে প্রথা অনুযায়ী উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ টার্কি ভোজ থেকে তিনি বিরত থেকেছেন।

President Barack Obama, with daughters Sasha, center, and Malia, right, carries on the Thanksgiving tradition of saving a turkey from the dinner table with a "presidential pardon" at the White House in Washington, Wednesday, Nov. 21, 2012.  After the ceremony, "Cobbler" will head to George Washington's historic home in Virginia to be part of the "Christmas at Mount Vernon" exhibition. National Turkey Federation Chairman Steve Willardsen watches at left. (AP Photo/J. Scott Applewhite)

President Barack Obama, with daughters Sasha, center, and Malia, right, carries on the Thanksgiving tradition of saving a turkey from the dinner table with a “presidential pardon” at the White House in Washington, Wednesday, Nov. 21, 2012. After the ceremony, “Cobbler” will head to George Washington’s historic home in Virginia to be part of the “Christmas at Mount Vernon” exhibition. National Turkey Federation Chairman Steve Willardsen watches at left. (AP Photo/J. Scott Applewhite)

অপরদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিবসটি পালনের জন্য ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজের অবকাশকেন্দ্রে জড়ো হয়েছেন পরিবার নিয়ে। তিনি সব বিভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত এক বছরে আমেরিকায় বিভেদ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমেরিকার জনগণকে পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে।

যারা আমরা দেশে আছি তাদের কাছে হয়ত শব্দটা নতুন মনে হতে পারে কিন্তু প্রবাসী ভাই বোনদের কাছে এটি মোটেই নতুন কোন শব্দ নয়, প্রত্যেক বছর অনেকই জাক-জমকপূর্ণভাবে এই দিনটিকে উৎযাপন করেন। থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র মূল ঊদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সকলে একত্রিত হয়ে প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য, দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য শোকরানা আদায় ও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো। আমেরিকানদের অনেকেই অজানা থ্যাঙ্কস গিভিং কবে থেকে শুরু, কেনই বা উৎসবটির নাম থ্যাঙ্কস গিভিং ডে হলো, কাকেই বা এমন ঘটা করে থ্যাঙ্কস জানানো হচ্ছে! তারা জানে, থ্যাঙ্কস গিভিং মানেই পার্টি, বিশাল ভোজ আয়োজন, পারিবারিক মিলনমেলা। ভুরিভোজনের তালিকায় থাকে টার্কী রোস্ট, ক্র্যানবেরী সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। আর কিছু না হোক, অতি সাধারণ আয়োজনেও টার্কী রোস্ট, ক্র্যানবেরী সস এবং পামকিন পাই থাকবেই। অর্থাৎ থ্যাঙ্কস গিভিং মানেই টার্কী। (টার্কীঃ ময়ুরের মত বড় সাইজের বনমোরগ জাতীয় পাখী)।18

১৬২০ সালে ‘মে ফ্লাওয়ার’ নামের এক জাহাজে চড়ে ১০২ জন নানা ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করার জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। কয়েকমাস পর তারা ম্যাসাচুসেটস বেতে এসে থামেন। যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে ও শীতের কোপে অসুস্থ ও দুর্বল হযয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে যারা সুস্থ ছিলেন তারা জাহাজ থেকে তীরে এসে নামেন। ওখানেই তারা প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কিভাবে কর্ন বা ভুট্টা চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয় এবং কিভাবে ম্যাপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।

১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য কর্ন নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিল। কর্ন বা ভুট্ট্রার ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে ভূরিভোজের আয়োজন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এমন সুন্দর শস্য দান করার জন্য। তারপর উপস্থিত সবাইসবাইকে ধন্যবাদ জানান সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। এই অনুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও ঘরে বসে নেই। পালন করেছে এই বিশেষ দিনটি। নিউইয়র্কের জ্যাকসন্স হাইটস, এসটোরিয়া, ব্রুকলীন, লংআইল্যান্ড ও ব্রোনক্সসহ নিউজার্সি, পেনসেলভানিয়া, বোষ্টন, ভার্জিনিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটসসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি ও মুসলমান মালিকানাধীন গ্রোসারির দোকানগুলোতে প্রচুর পরিমাণে হালাল টার্কি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত তিন দিন ধরে উক্ত দোকানগুলোতে দেদারছে চলছে হালাল টার্কির বেচাকেনা। থ্যাংকস গিভিং ডে উপলক্ষে ৪ কোটি ৫০ লাক্ষ জবাই হয়।3

থ্যাংকস গিভিং ডে’র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। এমনই ভাবে গত শুক্রবারে ব্রংন্ক্সের বেশ কিছু বাংলাদেশী পরিবার একত্রিত হয়ে উৎসব মূখর পরিবেশে উৎযাপন করলো থ্যাংক্স গিভিং ডে।

ব্রংন্কসের ক্যাসেলহীল এভিনিউস্হ কমিউনিটির পরিচিত মুখ খলিলুর রহমান মুন্সী ও নুসরাত জাহনের বাসায় অনুষ্ঠিত হলো এই আয়োজনটি। এই আয়োজনে উপস্হিত ছিলেন সৈয়দা শামসুন নাহার, আব্দুস টমাস, সাইফুল্লাহ সাবের, তৈয়ব, আব্দুর রশিদ বাতেন,   মুর্শেদা আখতার কাঁকন, নিগার সুলতানা টমাস, গুলশান চৌধুরী, কাজী রুবিনা বেগম, রেনু, বেবী মজুমদার, ফারহানা শাকের লীমা, শাকের সৈকত, রুবিনা আক্তার রুমা, শৈলী, প্রমি, ফারিহা, জাওয়াদ, রাজিন, মাহী, রিমন, তাহির, রামিম, আইজা প্রমুখ।4

বিশাল আকারের টার্কি রোষ্ট ছিল খাবারের তালিকার মূল আইটেম। টার্কির পাশাপাশি ছিল দেশী বিদেশী প্রচুর মুখরোচক খাবারের খাবারের আয়োজন।

বৃহস্পতিবার ২৪শে নভেম্বর প্রতিবারের মতোই এবারও অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড ফ্যামাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ‘মেসিস’ এর ৯০তম থ্যাংকস গিভিংডে’র বর্ণাঢ্য প্যারেড। এই প্যারেডে অংশ নেয়ার জন্য অনেকেই মধ্যরাত থেকে জড়ো হতে থাকে প্যারেড স্থান ৭৭ স্ট্রিট থেকে ৩৪ স্ট্রিট আর সিক্স অ্যাভিনিউর উপর। সকাল ৯টায় এ প্যারেড শুরু হয় ৭৭নং স্ট্রিট থেকে সিক্স অ্যাভিনিউর উপর থেকে। ম্যানহাটনের সিক্স অ্যাভিনিউর উপর রাস্তায় মার্চ করে এই প্যারেড শেষ হয় হেরাল্ড স্কয়ারে ৩৪নং স্ট্রিট ‘মেসিস’ এর সামনে। এখানে এসে কিছুক্ষণ বিভিন্ন মহড়া দেয়া হয়।16

শীতকে উপেক্ষা করে এবছর এই প্যারেডে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়নেরও বেশী লোকের সমাগম ঘটে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এবং আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা বিপুল সংখ্যক পর্যটক এ প্যারেড দেখতে এসেছিলেন। টার্কি, কর্নেকোপিয়া, পামকিন, সান্তা ক্লজসহ প্রায় ২৪টি কার্টুন চরিত্র স্পাইডার ম্যান, ডোড়া, স্পঞ্জপাপ, টিনেজ মিউটন নিঞ্জা টারটেল, ডাইরি দ্যা উইম্পি কিডস, হ্যালো কিটি, মিকি মাউস, কুংফু পান্ডা, পল ফ্রেংক, মিনিয়েম, এডভেঞ্চার টাইম, কেডিফিলার, টমাস দ্যা ট্রেন, সুন্পি ইত্যাদি চরিত্রের বেলুন ছিল এবারের প্যারেডের অন্যতম আকর্ষণ। আমেরিকার অনেক বিখ্যাত সেলিব্রেটির উপস্থিতি ছিল মেসিস এর থ্যাংকস গিভিং প্যারেডের মূল আকর্ষণ।macys-parade

থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র সারাদিন আনন্দে কাটিয়ে সকলেই প্রস্তুত হয় পরেরদিন ‘থ্যাঙ্কস গিভিং সেল’ এর জন্য। ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিং ডে- এরপর এবং বড় দিনের আগের শুক্রবারটি প্রথমবারের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের অফিস ও স্কুল থেকে ছুটি নেয় পুরোপুরি উৎসবের আমেজে দোকানে ভীর জমায় শপিং করার জন্য। এরপর থেকেই শপিং পাগল মানুষের কাছে এই দিনটি ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামে পরিচিত।তাই প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী শপিং প্রেমিকরা এই দিনটির জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। প্রতি বছর, আমেরিকায় থ্যাঙ্কস গিভিং সেল এর রমরমা ব্যবসা দেশটির অর্থনীতির সূচককাঁটা ঘুরিয়ে দেয়। ফলে থ্যাংঙ্কস গিভিং ডে’র ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য অপেক্ষা বাণিজ্যিক দিকটাই বেশী প্রকাশিত হয়ে পরে।

 

Awamileague Times
By Awamileague Times নভেম্বর ২৬, ২০১৬ ০৫:০০

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner