সজীব ওয়াজেদের প্রবন্ধ: উন্নত বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার
Related Articles
সজীব ওয়াজেদ: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক নানা খাতে উন্নয়ন দেখে পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা ইদানিং মাথা চুলকান। বাংলাদেশে যেন তাদের কাছে এক ‘প্যারাডক্স’। বাংলাদেশ নিয়ে আগের চিন্তা-ভাবনা আর বর্তমানের বাস্তবতা পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। তারা অবাক হয়ে বলেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব! এত দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনকাঠামোর কথা শুনি আমরা। তাহলে এমন অগ্রগ্রতি কীভাবে সম্ভব!’
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা নিজেদের ধারণাসমূহকে ভ্রান্ত প্রমাণ হতে দেখছেন। তারা ইদানিং বলা শুরু করেছেন, বাংলাদেশে সরকার দারুণ সাফল্য দেখাচ্ছে। অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের লড়াকু মনোভাব ও কঠোর পরিশ্রম দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। এখানে উন্নয়ন নীতিমালা ও পরিকল্পনারও সমান গুরুত্ব আছে। ২০০৯ সাল থেকে আমার মা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের গৃহীত উন্নয়ন নীতিমালা ও পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নের ফলেই বাংলাদেশ এই সুফল ভোগ করছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। এই ট্রাইব্যুনাল, বিচার প্রক্রিয়ার এমনই এক মানদণ্ড স্থাপন করেছে যে, রোম স্টেটিউট অব দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে মডেল হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার শুধু ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করতে সক্ষম হচ্ছে তাই নয়, রাষ্ট্র ও সমাজে সম্পূর্ণরূপে আইনের শাসন কায়েম করার পথেও অনেকখানি এগিয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মহাসড়কে জাতিকে তুলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য তাঁর সরকার বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষার প্রতি সরকারের বিশেষ মনোযোগের ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে নারীরা শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর নেতৃস্থানীয় পর্যায়েও দক্ষতা ও সাফল্যের সাথে কাজ করছে।
গ্রামে গ্রামে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ জাতীয় সমন্বিত ও বহুমুখী কৃষি ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের ফলে পরিবারগুলোর উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি জাতীয় উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। যে গৃহবধূকে এক সময় ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হত, সে গৃহবধূরাই এখন ঘর সামলানোর পাশাপাশি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি অংশ নিচ্ছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এভাবেই বদলে দিচ্ছেন এ নারীরা।
সাম্প্রতিক কালে প্রতিবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার থাকছে প্রায় সাতের কাছাকাছি। মোট দেশজ উৎপাদনের এ অগ্রগামী ধারা দেখে অনেকে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের মানুষ বিস্মিত হচ্ছেন। শুধুমাত্র গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদনেই দেশের শিল্পায়নের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ থাকছে না। তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা খাতে শিল্পায়ন ঘটছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে আইসিটি খাতে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানে যাওয়ার সম্ভাবনা আকাশচুম্বী। সরকার দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়ও ক্রমশ ইন্টারনেট ও অন্যান্য আইসিটি সেবা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জীবন যাত্রার মানোন্নয়নসহ জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশ কয়েকটি লক্ষ্য অর্জনে যে কয়টি দেশ সফল হয়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দারিদ্রের হার নেমে এসেছে ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, বর্তমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০তম বছরের শুভলগ্নে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
২০০৯ সালে যখন সরকার ক্ষমতায় আসে তার কয়েকদিন পরেই ‘বেতন ও কর্ম পরিবেশ’ সংক্রান্ত কারণে সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহের মত ঘটনা ঘটে। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, সরকার হয়তো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু সরকার সংলাপের মাধ্যমে সেই বিদ্রোহ দমন করতে পেরেছিল।
রানা প্লাজার বিপর্যয় হওয়ার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে গার্মেন্টস খাতে স্থবিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। রানা প্লাজায় এক হাজার ১২৯ জন প্রাণ হারায়। পশ্চিমা গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নেয়ার মত পরিস্থিতি দেখা দেয়। সরকার তড়িৎ কয়েকটি ব্যবস্থা নেয়ার ফলে পশ্চিমা ক্রেতারা আর মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। এখন বরং তারা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের প্রশংসা করেন। রানা প্লাজার ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওয়তায় আনাসহ গার্মেন্টস শিল্পের সকলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে সরকার। সরকার কঠোর নজর রাখছে গার্মেন্টস শিল্পের উপর।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় অনেকেই ঘোষণা করেছিলেন যে, বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ হয়েছে! ‘গণতন্ত্র’ কায়েমের নামে বিরোধীরা দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের নামে আগুনে পুড়িয়ে, বোমা মেরে দিনে-দুপুরে মানুষ হত্যা শুরু করে। সরকার জনগণের সমর্থন নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। ২০১৫ সালে দি ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট এর একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের সিংহভাগ মানুষ সরকারের সাফল্যের উপর আস্থা রাখছে। মানুষ বিশ্বাস করে সরকার ও দেশ সঠিক পথেই আছে।
উন্নয়নের সাফল্যধারায় বাংলাদেশ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে অনুসরণ করছে। এ দুটো দেশ দীর্ঘদিন একটা শক্তিশালী এবং দূরদর্শী উন্নয়ন কাঠামোর ভেতর দিয়ে গেছে। সরকারের দূরদর্শিতা ও দক্ষ নেতৃত্বে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থেই উন্নয়নের একটি পরিষ্কার ও স্থিতিশীল পথে আছে।
গণতান্ত্রিক অগ্রগতির প্রক্রিয়া সহিংস কোনো কারণে ব্যাহত হওয়ার চেষ্টা হলে, দেশের মানুষ এবং সরকার আর কোনো ভাবেই তা সহ্য করবে না। দুর্নীতি নিয়েও সজাগ থাকা লাগবে। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের মত উন্নয়ন অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম হয়নি।
লেখক: সজীব ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা
Related
সর্বশেষ খবর
বাংলার ইতিহাস
তথ্য ও প্রযুক্তি
মতামত-বিশ্লেষণ
-
লুসি হেলেনের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী (৭৮১ view)
-
পদ্মা সেতুর ৪র্থ স্প্যান স্থাপনের প্রস্তুতি শুরু (৫৫৫ view)
-
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩ হাজার নতুন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হবে : ত্রাণমন্ত্রী (৪৭৮ view)
-
আওয়ামী লীগেই থাকুক আওয়ামী লীগ! (৩৭৫ view)
-
আগামী নির্বাচনে ইনশাল্লাহ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে : প্রধানমন্ত্রী (৩১১ view)
![Ajax spinner](https://awamileaguetimes.com/wp-includes//images/wpspin-2x.gif)
![Banner](http://awamileaguetimes.com/wp-content/uploads/2022/06/06072022_IMG04_BANGLADESH_IMPORTANT_NUMBERS-scaled.jpg)