নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতির মর্যাদা দিন : প্রধানমন্ত্রী

Awamileague Times
By Awamileague Times ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮ ২০:৪০

নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতির মর্যাদা দিন : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশের মাসব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করে নিজ দেশের ভাষা ও কৃষ্টি, শিল্প-সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে মর্যাদা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ভাষা, নিজেদের শিল্প-সাহিত্যকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে না পারি, তার উৎকর্ষ সাধন করতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের দরবারে আরো উন্নত হতে পারবো না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী এই গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন।তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে- অশুভ পথে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কখনও ভাষা বা সংস্কৃতির চর্চা করতে জানে না। কারণ, এদের মানসিকতা একটু ভিন্ন।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের যে চেতনা সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশকে গড়তে চান উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, যে বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, যে বাংলাদেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তাঁদের ধর্ম-কর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, এমনকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও তাদের ভাষার চর্চা করতে পারবে। তাছাড়া আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। যেখানে হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূর বক্তৃতা করেন।সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.ইব্রাহিম হোসেন খান এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটনও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ।

বিদেশি অতিথিদের মধ্যে-যুক্তরাজ্যের কবি ও লেখক এগনিস মিডোস, ক্যামেরুনের কবি ও সৃষ্টিশীল লেখক অধ্যাপক ড. জয়েস অ্যাসউনটেনটং, মিসরের লেখক ও প্রখ্যাত টেলিভিশন সাংবাদিক ইব্রাহিম এলমাসরি এবং সুইডেনের কবি ও সাহিত্য সমালোচক অরনে জনসন বক্তৃতা করেন । বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ১২ জন কবি, সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকারের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক এবং নগদ অর্থের চেক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘আলোকচিত্রে বাংলা একাডেমির ইতিহাস’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক দু’টি বই উপহার দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ ও সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকবৃন্দ, কূটনিতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশকসহ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে একুশের গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূচনা সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশিত হয় এবং অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীরা হচ্ছেন- কবিতায়- কবি মো. সাদিক ও কবি মারুফুল ইসলাম, কথা সাহিত্যে- মামুন হোসেন, প্রবন্ধে- অধ্যাপক মাহবুবুল হক, গবেষণায়- অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান, অনুবাদে- লেখক আমিনুল ইসলাম ভূইয়াঁ, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্যে- মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হাসান ভূঁইয়া ও সুরমা জাহিদ, ভ্রমণ কাহিনীতে- শাকুর মজিদ, নাটকে- অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে- মোশতাক আহমেদ এবং শিশু সাহিত্যে ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলা একাডেমিতে আজকে বইমেলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে- পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বই বাংলায় অনুবাদ হচ্ছে, আমাদের বাংলা ভাষার লেখাগুলোও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবার যখন বইমেলা হয় তখন কোন না কোন দেশের কবি-সাহিত্যিকরা এখানে উপস্থিত হন। যাদের অনেকেই বাংলা ভাষার চর্চা করেন, তাঁরা আমাদের উৎসাহিত করেন এবং বাংলাভাষার মর্যাদা বিশ্বে আরো বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৪ সালে বিশ্বের খ্যাতনামা কবি-লেখক-প-িতগণের অংশগ্রহণে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রথম বাংলা সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এর উদ্বোধন করেছিলেন বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে ভাষার দাবি আদায়ে ১৯৫২ সালের অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়া পর্যন্ত বাঙালির গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় কানাডা প্রবাসী বাঙালি প্রয়াত রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালামের উদ্যোগে এবং তাঁর সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইউনেস্কোর মাধ্যমে অমর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার কথাও উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কতৃর্ক বিশ্ব প্রামান্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষাকে আজকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

এই ভাষণ আড়াই হাজার বছরের যে সকল সামরিক ও বেসামরিক নেতৃবৃন্দের ভাষণ, যা মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করেছিল, সে রকম ৪১টি ভাষণ নিয়ে ব্রিটিশ লেখক-গবেষক জ্যাকব এফ ফিল্ড’র ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্যা বিচেস’ নামে যে বই বের করেন তাতেও স্থান করে নিয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাঙালি জাতি এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আজকে আন্তর্জাতিকভাবে যে স্বীকৃতি ও মর্যাদা পেয়েছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের আলোকে দেশের ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে ধরে রাখায় তাঁর সরকার বরাবরই আন্তরিক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বইমেলা কিন্তু কেবল বই কেনাবেচার জন্য নয়। বইমেলা কিন্তু আকর্ষণ করে। আমাদের সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রটা প্রসারিত করে। অজানাকে জানার সুযোগ করে দেয়। কাজেই আমরা নিজেরাই এই বইমেলাকে বলি এটা আমাদের প্রাণের মেলা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে অনুষ্ঠিত এই বইমেলা দেশের অনেক নবীন লেখককে তাঁদের সাহিত্যকর্ম প্রকাশের সুযোগ করে দেয় আবার অনেক পাঠক সৃষ্টি করে। তিনি লেখক, পাঠক এবং পরিবেশক সকলকেই অভিনন্দন জানান এই মেলার মধ্যদিয়ে আমাদের জ্ঞান চর্চার দ্বারকে উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য।

পরে প্রধানমন্ত্রী বইমেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং প্রকাশক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।মেলার বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৫ লাখ বর্গফুট এলাকায় ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার ৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৫টি প্যাভেলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মেলা ছুটির দিন ব্যতীত বইমেলা প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেলেই সেমিনার এবং সন্ধ্যায় মেলা উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

Awamileague Times
By Awamileague Times ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮ ২০:৪০
01212016_11_ALBD_CONSTITUTION

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner