রোহিঙ্গা সংকট অবসানে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের ওপর ভারতের চাপ প্রয়োগ কামনা করেছেন

Awamileague Times
By Awamileague Times ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮ ১৪:৩০

রোহিঙ্গা সংকট অবসানে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের ওপর ভারতের চাপ প্রয়োগ কামনা করেছেন

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর ভারতের চাপ প্রয়োগ কামনা করে বলেছেন, বাংলাদেশে তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত নিরাপত্তার ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ভারত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসবভবন গণভবনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৮ উপলক্ষে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ‘ল’ এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আইসিএলডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন্ডিয়া মিডিয়া ডায়ালগ’এ অংশগ্রহণকারী কলকাতা ও দিল্লীর সাংবাদিকদের সৌজন্য সাক্ষাতকালে এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিএলডিএস চেয়ারম্যান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির, আইসিএলডিএস ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, উপদেষ্টা মোজাম্মেল বাবু, আহবায়ক শ্যামল দত্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও বিদেশ থেকে আগত সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, তিস্তার পানি বন্টন, যোগাযোগ এবং বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের ভারতে সম্প্রচার সম্পর্কিত বিষয় উঠে আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়েছে। বর্ষার মওসুম ঘনিয়ে আসছে। এ সময় রোহিঙ্গাদের এভাবে রাখা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাদের জন্যও।’তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ছোট ছোট শিশুরা রয়েছে এবং প্রতিদিনই শিশুর জন্ম এই সংখ্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি সেখানে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ এবং যুবক রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়াও সেখানে বৈশ্বিক সমস্যা জঙ্গিবাদের উত্থান হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যখন জনগণের মধ্যে হতাশা এসে পড়ে এবং কোন কাজ থাকে না তখন তাদের কেউ কেউ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তেই পারে। যদিও আমরা লক্ষ্য রাখছি এ ধরনের কোন ঘটনা যেন না ঘটে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা ভারতের সহযোগিতা চাই, তারা যেন মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যদি ভারত মিযানমারকে চাপ অব্যাহত রাখে তাহলে হয়তো তারা তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে ৫টি দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে তাদের সঙ্গে সংলাপ আয়োজনের। যাতে করে তারাও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনাও চলছে এবং নেপিডো ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সম্মত হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, ভারতও এ ব্যাপারে সক্রিয় যাতে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের ওপর কোন নির্যাতনের ঘটনা না ঘটে।

বাংলাদেশ-চীন বর্তমান সম্পর্ক এবং সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের এই বিষয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই কেননা, সকল দেশ বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে।তিনি বলেন, ভারত, জাপান এবং এমনকি মধ্যপূর্ব দেশগুলোও বাংলাদেশে আসছে সহযোগিতার জন্য। আমরা চাই বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা- যারাই এ বিষয়ে আগ্রহী হোক। কারণ আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে এ বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগের কোন কারণ নেই। বরং আমি ভারতকে পরামর্শ দেবো তারা বাংলাদেশসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুক যাতে করে এই অঞ্চলের আরো উন্নয়ন হয়। আমরা বিশ্বকে দেখাতে পারি যে আমরা সকলে একত্রে কাজ করছি।তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের কথা আমাদের ভাবতে হবে। কারণ তারা এই উন্নয়নের অংশীদার।’ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্পর্কিত এক পশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বন্ধন অত্যন্ত চমৎকার এবং তিনি এ বিষয়ে কোন চ্যালেঞ্জ দেখছেন না।দুই দেশের মধ্যে যে কোন দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত ইতোমধ্যেই সমুদ্র এবং সীমান্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে এর দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন সমস্যার উদ্ভব হলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করতে পারি, যেভাবে অতীতে করে এসেছি। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে চাই।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সমস্যারই আমরা সমাধান করেছি। আমার প্রথম মেয়াদে সরকারে থাকার সময় আমরা গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করি। দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার সময় সমুদ্র সমস্যার সমাধান এবং স্থল সীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন করি।’ স্থল সীমানা চুক্তির বাস্তবায়নকে একটি ঐতিহাসিক বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সংসদে এটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। এই ছিটমহল বিনিময় খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক এবং আনন্দঘন ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই শত্রু, সেটা হচ্ছে দরিদ্র এবং এর বিরুদ্ধে আমরা একযোগে লড়াই চালিয়ে যাব।’

ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়ের কথা উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এ ব্যাপারে আশাবাদী। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পাদিত লাইন অব ক্রেডিটসহ সকল চুক্তির সফল বাস্তবায়নেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।তিনি মৃদু হেসে বলেন, আমাদের একটাই দুঃখ দিদি মনি (মমতা ব্যানার্জী) তিস্তার পানি দিলো না, আমরা যখন পানি চাইলাম তিনি বিদ্যুৎ দিতে চাইলেন। সেটা আমরা গ্রহণ করেছি।এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের রাজ্য সরকার কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারে না। আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বিষয়টিতে না বলেননি। আরো আলোচনা চলছে এবং আমরা এর জন্য প্রতীক্ষায় রয়েছি।

তিনি আরো বলেন, তাঁর সরকার দেশের নদীগুলোর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিং করে যাচ্ছে।আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান এবং এখানে নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়া দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দলই সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচন করবে কি করবে না। এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই নেই।তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক দলের কোন অভাব নেই। বিএনপি’র ২০ দলীয় জোট এবং আমাদের ১৪ দলীয় শরীক জোট রয়েছে। পাশাপাশি জেনারেল এরশাদেরও একটি জোট রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি গত নির্বাচন বয়কট করেছিল। এটি তাদের রাজনৈতিক ভূল ছিল। ভবিষ্যতে বিএনপি কি করবে আমার জানা নেই। তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভূগছে। আমি মনে করি তাদের অধিকাংশ নেতার মতই নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে। তিনি বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Awamileague Times
By Awamileague Times ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮ ১৪:৩০
01212016_11_ALBD_CONSTITUTION

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner