তৃণমূলের ভাবনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি!

Awamileague Times
By Awamileague Times সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯ ১২:২৪

তৃণমূলের ভাবনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি!

শিব্বীর আহমেদ: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মেয়াদ তিন বছর। কিন্তু এই তিন বছরের কমিটি কখনোই তিন বছরে শেষ হয়নি। আর প্রতি তিন বছরে নতুন কমিটি হবার সম্ভবত কোন কারনও নেই প্রবাসের মাটিতে। আগেকার কমিটিগুলো তাই হয়েছে। ২০১১ সালে গঠিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নিয়মতান্ত্রিক কমিটির মেয়াদ ২০১৪ সালেই শেষ হয়েছে। যথারিতি নুতন কমটিরি দাবীও উঠেছে ২০১৪ সাল থেকেই। কিন্তু দাবী পুরন হয়নি তৃনমুল নেতাকর্মীদের। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পরিবর্তনের জন্য গত পাঁচ বছরই দাবী জানানো হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর। কিন্তু দাবী রয়ে গেছে দাবীর জায়গাতেই।

তৃণমুল নেতৃত্বের পরিবর্তন চাইলেই নেতৃত্বের পরিবর্তন করা হয়ত সম্ভবও নয়। কারন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মত একটি বড় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া খুবই কঠিন একটি কাজ। শুধুমাত্র নেতৃত্বের যোগ্যতা বিবেচনায়ও নেতৃত্বের পরিবর্তন সম্ভব নয়। যোগ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রয়োজন আস্থা ও বিশ্বাসের। জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং সজিব ওয়াজেদ জয়ের আস্থাভজন নেতৃত্ব প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। কিন্তু সেই ধরনের যোগ্য ও আস্থাভাজন নেতৃত্ব কি আদৌ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জন্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব! নাকি তৈরি করা হয়েছে সেই রকম কোন নেতৃত্ব। আর কারাই বা তৈরি করবে সেই নেতৃত্ব বা সেই আস্থা ও বিশ্বাস। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছেন তারা কোন ভাবেই চাইবেনা নুতন কোন নেতৃত্ব তৈরি হোক। তাদের পাতের ভাত কেড়ে নিক।

অতীতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারাই এসেছে তাদের সবার ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব ও আস্থার প্রশ্ন জড়িত হয়েছে। যে নেতৃত্ব ছাত্রলীগের নেতৃত্বের সাথে জড়িত ছিলনা যে নেতৃত্ব যুবলীগের সাথে জড়িত ছিলনা সেই রকম একটি নেতৃেত্বর যোগ্যতা ও আস্থার প্রশ্ন যেকোন সময় উঠে আসাটা খুবই স্বাভাবিক। যে নেতৃত্ব ছাত্রজীবনে আওয়ামী লীগের আদর্শ লালন করলনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করতে পারলনা, অগ্নীঝরা স্লোগান জয় বাংলার মধ্য দিয়ে বড় হতে পারলনা সেই রকম একটি নেতৃত্ব কখনই আওয়ামী নেতৃত্বের আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন করতে সমর্থ হবেনা।

২০১১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে গঠিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এখন প্রায় শুন্যের কোঠায়। অদক্ষতা আওয়ামী রাজনীতির চেতনার অনুপস্থিতি এবং সর্বপোরি একটি সুবিধাবাদী নেতৃত্বের ফলশ্রুতিতে গত আট বছরে একে একে বিলীন হয়েছে অনেক নেতৃত্বে। অনুপ্রবেশ ঘটেছে নুতনের। যার ফলে দলের ভিতরে বাইরে বিভক্তি এসেছে নানা ভাবে যা এখন একটি চরম পর্য্যায়ে রয়েছে বলে তৃণমুল নেতৃত্ব মনে করে। কিন্তু এ থেকে উত্তরনের উপায় কি?

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন নেতৃত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। রয়েছে মিশ্র ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। প্রতি বছরেই যখন জননেত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আসেন তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ উত্তেজনার সঞ্চার হয়। আশা জাগে জননেত্রী শেখ হাসিনা হয়ত এবার নতুন কমিটি দিবেন। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কমিটি দেবেন কি দেবেন না তা সম্পূর্ণই নির্ভর করছে জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর। কিন্তু নুতন কমিটি নিয়ে থেমে নেই নেতাকর্মীদের স্বপ্ন।

২০০৯ সালের পর পরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধীষ্টিত হবার পর এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নুতন মেরুকরন শুরু হয়েছে। সুবিধাবাদী চরিত্রগুলো ধীরে ধীরে তাদের লেবাস পাল্টে আওয়ামী রাজনীতির সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করবার চেষ্টা করছে নানা ভাবে। আর এই চেষ্টায় সহযোগীতা করছে আওয়ামী লীগের মোটা তাজা নেতাকর্মীরাই। ফলে এখন কে আসল আর কে নকল বুঝা বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আর অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের মোটাতাজা নেতাকর্মীদের ঘাঁড়ে চড়ে দলের ভিতরে অনুপ্রবেশকারীরা এখন আসল আওয়ামী লীগারদের চাইতেও বড় আওয়ামী লীগার বনে গেছে। তাদের জয় বাংলা স্লোগানের আওয়াজে আসল আওয়ামী লীগাররা লজ্জায় ধীরে ধীরে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে আওয়ামী লীগার আর নন আওয়ামী লীগার অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে চলছে নিরব যুদ্ধ যা মাঝে মধ্যে সরব আকারেও নজরে আসে সবার।

বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য নুতন নেতৃত্ব নিয়ে জল্পনা কল্পনা তৃণমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে। এর মধ্যে ড. জিয়াউদ্দীন অন্যতম। কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে নারাজ আলপাচারিতায় এমনটাই মনে হল। তার নিকটজনের ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে এখন যে বেসামাল দৈন্যদসা চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে এটি সামাল দেয়া অনেক কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এই অবস্থা তৈরী করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে হয়ত গুটি কতেক নেতাকর্মীরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু বৃহৎ অর্থে আওয়ামী লীগরই ক্ষতি হচ্ছে।

তারা বলেন, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে জননেত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে একটি থিংকট্যাংক করে দিলে আমরা সেখানে কাজ করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের পক্ষের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক ইন্টেলেকচ্যুয়াল রয়েছে। তাদের সবাইকে একত্রিত করে একটি থিংকট্যাংক করলে আমরা সেখানে সরকারের পক্ষে কাজ করতে পারব।

হাতেগোনা কিছু সুবিধাভোগী নেতৃত্ব ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন নেতৃত্বের প্রতি তাকিয়ে আছেন সবাই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি না বলে এটিকে নিউইয়র্কের কমিটি বলাই বোধহয় শ্রেয়। নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থাকা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের হাতেগোনা দুই তিনজন ছাড়া সবাই নিউইয়র্কের। এই নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিউইয়র্কের বাইরের ষ্টেট থেকে হওয়াই উত্তম বলে মনে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কারনে নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড স্থবীর হয়ে পড়েছে। দলের নেতাকর্মীদের কোন কাজ নেই। কিন্তু নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ যথেষ্ট। এখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক খালিদ হাসানের প্রশংসা করে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছিল ওয়াশিংটনে। অধ্যাপক খালিদ হাসান ও তার স্ত্রী জাহানার হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সাথে অনেক কাজ করেছে। কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব রাতদিন চব্বিশঘন্টা জ্যাকসন হাইটসে বসেবসে গুটি চালাচালি করে দলের এখন তেরটা বাজিয়ে ছাড়ছেন। রাতদিন ঝগড়াঝাটি মারামারি অর্থের ভাগাভাগি চাঁদাবাজী সবই হচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে কোন যাচাই বাছাই ছাড়া দলের ভিতরে লোক এনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। অথচ দেখবার মত কেউ নেই।

বিশ^ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ একটি আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করবার মত যোগ্য নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে অনুপস্থিত। বললেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রার্থী ড. খন্দকার মনসুর। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি ওয়াশিংটনে হলে সিনেটর কংগ্রেসম্যান লেভেলে কাজ করা সহজ হবে। এতে সরকার উপকৃত হবে। দেশ উপকৃত হবে।

তিনি বলেন, নিউইয়র্কের কমিটিগুলো নিউইয়র্কে কাজ করতে সক্ষম বলে আমি মনে করি। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সবাই নিউইয়র্কের। এতে নিউইয়র্কের অন্যান্য কমিটিগুলোতে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিবীদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে পুরো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি একটি থিংকট্যাংক তৈরী করা জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা পদ দখল করে কার্ড ছাপিয়ে বছরের পর বছর দেশে অবস্থান করেন। সরকারের সবকিছুর সুযোগ নিয়ে তারা ব্যবসা বাণিজ্য করেন। কিন্তু যখনই নেত্রী যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তখন তারা শীতের পাখির মত আবার ছুটে আসেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জন্য মায়াকান্না শুরু করেন। নেত্রীর সর্ম্বধনা সভায় এই সুবিধাভোগী রাজনৈতিক চরিত্রগুলোকে এমন ভাবে দেখা যায় যেন তাদের মত এমন আওয়ামী লীগার আর নাই। আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে এই সুবিধাবাদী রাজনীতিবীদদের বিদায় করা জরুরি। যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন এই রকম নেতৃত্ব দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পুর্ণগঠন করা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হবে কি হবেনা এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরন চাইছে সবাই। তবে শেষ সিদ্ধান্ত জানাবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর সেই দিকেই আছেন সবাই।

  • লেখক সাংবাদিক, নিউ ইয়র্ক
Awamileague Times
By Awamileague Times সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯ ১২:২৪
01212016_11_ALBD_CONSTITUTION

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner