পরিবর্তনের অগ্রদূত শেখ হাসিনা তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ

Awamileague Times
By Awamileague Times সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬ ০৫:১২

পরিবর্তনের অগ্রদূত শেখ হাসিনা তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ

sheikh-hasina-28-09-2016এম. নজরুল ইসলাম: কল্যাণমন্ত্রে যাঁর দীক্ষা, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘মানুষের ধর্ম’ যিনি ধারণ করেন হৃদয়ে, জনগণের সেবা যাঁর ব্রত, তিনিই তো অমৃতের সন্তান। সামরিকতন্ত্র ও ‘কার্ফিউ গণতন্ত্রে’র দেড় দশকের দুঃশাসন এবং গণতন্ত্রের নামে দুই দফায় এক দশকের অপশাসনের মূলোৎপাটন করে যিনি বাংলাদেশকে আজ নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। আজকের বাংলাদেশকে নিয়ে তাই উচ্ছ¡সিত সারা বিশ্ব। একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশকে নিয়ে সংশয় ছিল সারা বিশ্বের। সেই অবস্থা থেকে আজকের উত্তরণে যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি শেখ হাসিনা। তাঁর সাহসী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হয়েছে। নেতিবাচক অবস্থান থেকে বিশ্বে ইতিবাচক দেশ হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপপ্রায়স কম হয়নি। জান্তার বুটের তলায় নিষ্পিষ্ট গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি বিদেশের নিশ্চিত জীবন ছেড়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তীকালে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে পাওয়া দুর্জয় সাহস ও অনমনীয় মানসিক শক্তি নিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে চলেছেন, এককথায় তা তুলনারহিত। অসাধারণ ধৈর্য ও পর্যবেক্ষণ শক্তি শেখ হাসিনাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। যে অসা¤প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনা তিনি ধারণ করেন, তা বাস্তবায়নে তাঁর দাঢ্য আমাদের বিস্মিত করে। তাঁর এই দৃঢ়তার পরিচয় আমরা পেয়েছি ওয়ান-ইলেভেন নামের চেপে বসা শাসনামলেও। রাজনীতি থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মিথ্যা মামলা, দীর্ঘদিনের কারাবাস তাঁকে তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যূত করতে পারেনি। তিনি সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। তাঁর এই অনমনীয় মনোভাব দেশের মানুষকে সাহস জুগিয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ তাঁকেই দিয়েছে দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট। সেই জনআস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন দেশ পরিচালনার ভার নেয়, তখন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অনেক জঞ্জাল জমেছে। আগের বিএনপি সরকারের দুঃশাসন প্রশাসন থেকে আর্থসামাজিকÑসর্বক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই সেই জঞ্জাল দূর করতে সচেষ্ট হন। অনেকাংশে সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু ২১ বছরের জমে থাকা জঞ্জাল তো মাত্র পাঁচ বছরে দূর করা সম্ভব নয়। ২০০৯ সালে জনগণের রায়ে দেশ পরিচালনার ভার নিয়েই নতুন উদ্যোগে যাত্রা শুরু করেন তিনি। গত কয়েক বছরে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। দেশ একাত্তরের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। একসময় খাদ্য আমদানির দেশ বাংলাদেশ আজ খাদ্যপণ্যে উদ্বৃত্ব। এমডিজি অর্জনের পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি গৃহীত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশ আজ ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করছে। জনগণের দোরগোড়ায় ২০০ ধরনের সেবা পৌঁছে দিতে প্রায় ৮ হাজার ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ও ডিজিটাল ল্যাব।
তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে নির্মিত হয়েছে একাধিক ফ্লাইওভার। খুব শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। একসময় বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে দেশে লোডশেডিং লেগেই থাকতো। গত ৭ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণও। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি। সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার দ্রæত কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। সবই সম্ভব হচ্ছে তাঁর ইতিবাচক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণে। তাঁর বর্তমান শাসনামলে বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন)-এর মধ্যে ‘মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক’ তৈরি হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। এসব অর্জনের নেপথ্যে রয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রগতিশীল নেতৃত্ব।
দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রথম পুরস্কার তিনি পেয়েছেন তাঁর জনগণের কাছ থেকেই। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ওপর আস্থা স্থাপন করেছে বারবার। এবছর তিনি অর্জন করেছেন ইউএন উইমেনের ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার ও গেøাবাল পার্টনারশিপ ফোরামের ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’। দুটি পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য। দুটি পুরস্কারই তিনি উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের মানুষকে। বলেছেন, ‘এ পুরস্কার আমাদের নারীদের জন্য এক স্বীকৃতি, যারা আমাদের পুরুষদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলেছে। এই পুরস্কার আমি বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করছি, যারা আমার পরিবর্তনের দর্শনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।’ এখানেই তাঁর উদারনৈতিক নেতৃত্বের পরিচয় মেলে। তিনি নিজের অর্জন ভাগাভাগি করে নিতে পারেন তাঁর জনগণের সঙ্গে। আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁর অর্জন ‘আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড’। রাজনীতিতে নারী পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘ওমেন ইন পার্লামেন্ট গেøাবাল অ্যাওয়ার্ড’। ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো তাঁকে শান্তিবৃক্ষ পদকে ভূষিত করে। ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো অপেরাশন তাঁকে ‘সাউথ সাউথ’ পুরস্কারে ভূষিত করে। বাংলাদেশের জন্য এমন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান বয়ে এনেছেন তিনি।
বাংলাদেশের আজকের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। এই অর্জন ধরে রাখতে ও উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের তুল ধরতে তাঁর গতিশীল নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক তিনি। তাঁকে ঘিরেই সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।
এদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক তিনি। আজ তাঁর জন্মদিনে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি। দীর্ঘজীবী হোন তিনি। মানুষের ভালোবাসার সম্পদে সমৃদ্ধ হোক তাঁর আগামী দিনগুলো।
লেখক: অস্ট্রিয়া প্রবাসী লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক

Awamileague Times
By Awamileague Times সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬ ০৫:১২

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner