সন্ত্রাসবাদের পক্ষে অথবা বিপক্ষে: বাংলাদেশের ব্যপারে আমেরিকাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে

Awamileague Times
By Awamileague Times আগস্ট ৪, ২০২৩ ০৪:৫৮

সন্ত্রাসবাদের পক্ষে অথবা বিপক্ষে: বাংলাদেশের ব্যপারে আমেরিকাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে

ডঃ দিলওয়ার আরিফ ও ডঃ নুরুন নবী : আমেরিকার কাছে বাংলাদেশ কেন গুরুত্বপূর্ণ এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ২০১২ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বাংলাদেশে আমেরিকান সেন্টারে এক আলাপচারিতায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াইয়ে বাংলাদেশের অবদানের বিষয়টিকেই অন্যতম নির্ধারক হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ্ করেছিলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে সরকারই অবস্থান নেয় তাকে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাবে। জঙ্গিবাদ বিরোধী বৈশ্বিক লড়াইয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণঃ দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে বাংলাদেশের ভু-রাজনৈতিক অবস্থান, বিশ্ব জনসংখার দিক থেকে অষ্টম এবং মুসলিম জনসংখার দিক থেকে বাংলাদেশের চতুর্থ অবস্থান।

সর্বোপরি বাংলাদেশের এক চতুর্থথের বেশি জনসংখা স্বাক্ষরহীন এবং দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করার ফলে ধর্মীয় জঙ্গি গুষ্ঠীগুলোর অভয়ারণ্য হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ। আর এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভুরাজনইতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সব দেশ বাংলাদেশে এমন একটি সরকার প্রত্যাশা করে যারা জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করার জন্য বদ্ধ পরিকর। এমনটিই আমরা জানতাম।

কিন্তু, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সমর্থনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা প্রদান সংক্রান্ত যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার একটি প্রতীকী অর্থ আছে। এর মানে হচ্ছে যে, জঙ্গিবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের ব্যাপারে বর্তমান সরকারের গত এক যুগেরও বেশি সময়ের সাফল্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা মনে করিনা যে আওয়ামী লীগ সরকার ধুঁয়া তুলশী পাতা এবং তাদের কোনো দোষ ত্রুটি নাই। বিশ্বের যেকোনো সফল সরকারের মত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারেরও কর্মকাণ্ডে ছোট খাট ভুল ত্রুটি আছে বা থাকতে পারে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আওয়ামী লীগের সাফল্যকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা। ২০১৪ সালে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ছিল ২৩তম, গত দশ বছরের ব্যবধানে তা কমে ৪৩তমে এসেছে। এটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের যে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন তা স্বীকার করতেই হবে।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে সারা বিশ্বের কাছে ভয়ঙ্কর মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসীদের সুতিগার হিসাবে চিন্তিত হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০১ সালে বাংলাদেশের অন্যতম মৌলবাদী দল জামাতের হাত ধরে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের তীব্র উত্থানের ফলে বিশ্ব গণমাধ্যম বাংলাদেশকে আখ্যা দিয়েছিল, “সন্ত্রাসের সূতিকাগার” কিংবা “পরবর্তী আফগানিস্তান” হিসাবে। এর অবশ্য কারণও ছিল। তখন বিএনপি জামাত স্লোগান দিত, “বাংলা হবে আফগান”। এসব ধর্মীয় উগ্রবাদী গুষ্ঠীগুলো আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ক্ষমতা গ্রহণ করা মাত্রই শেখ হাসিনা সরকার জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের ব্যাপারে তার সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং তিনি বলেন যে, ইসলাম ধর্মের সাথে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নাই এবং এসব উগ্রপন্থীরা ইসলামের আসল প্রতিনিধিত্ব করেনা। তিনি সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলতে বলেন এবং বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন রেবকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। যার ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বাংলা ভাই এবং শাইখ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে যে বাহিনী একই দিনে সারা বাংলাদেশে বোমা হামলা করে ছিল তাদেরসহ সকল ধর্মীয় জঙ্গি গুষ্ঠীগুলোকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আর অনেকগুলো ছোট ছোট জঙ্গিগুষ্ঠী গড়ে উঠছিল এবং সেগুলোকে সমূলে উৎপাটিত করে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এক নজির স্থাপন করে।

বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম প্রধান দেশে এরকম বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে রাজনৈতিকভাবেও ছিল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ হয়ে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য সারা বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু মার্কিন আইন প্রণেতার তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে তারা কি জেনে বুঝে এবং তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে নাকি তাদের জ্ঞান বুদ্ধি বিলোপ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হিসাবে আমরা কংগ্রেসম্যানদের এইরকম পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি তাদের এই পদক্ষেপ সন্ত্রাসব্দের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সমর্থনকে বিরোধিতা করার শামিল। বাংলাদেশ অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচন চাওয়া এবং মানবাধিকার বাস্তবায়ন করার বিষয়টিকে আমরাও সমর্থন করি। কিন্তু এর নামে “রেজিম চেঞ্জ” করার পায়তারাকে আমরা সমর্থন করিনা। আমরা মনে করি এ ধরনের তৎপরতা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। আমরা মনে করি, আরও অনেক সরকারের মত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও সরকার চালানোর ক্ষেত্রে ভুল ত্রুটি আছে। কিন্ত, বৈশ্বিক রাজনীতির মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বর অবদান বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের মুল উৎপাটন।

– দিলওয়ার আরিফ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অ্যালাব্যামার ডিজিটাল সাংবাদিগতার সহযোগী অধ্যাপক এবং ইউএসএ ফ্যাকাল্টি সিনেটের সদ্য বিদায়ি প্রেসিডেন্ট। darif@southalabama.edu
– ডঃ নুরুন নবী: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের প্লাইন্সবরু শহরের কাউনসিলম্যান এবং একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, nurannabi@gmail.com.

Awamileague Times
By Awamileague Times আগস্ট ৪, ২০২৩ ০৪:৫৮

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner