আওয়ামী লীগেই থাকুক আওয়ামী লীগ!

Awamileague Times
By Awamileague Times ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬ ০২:১৮

আওয়ামী লীগেই থাকুক আওয়ামী লীগ!

বাপ্পী রহমান: হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল সময়ের প্রয়োজনে। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রয়োজনে। পূর্ব-বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরাতন ঢাকার কে এন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দলটি। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীরা সেখানে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামে বাঙালির লড়াইসংগ্রামের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ।

ইতিহাসের সরল পাঠ জন্মলাভের পর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয়দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এই দলের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ক্রমশ এগিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এই দলের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ নিজেদের স্থান দখল করে। আর এসব আন্দোলনের পুরোধা ও একচ্ছত্র নায়ক ছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ডাকেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। ফলশ্রুতিতে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি, চড়াই-উৎরাই ও ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। দলের ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ফের ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। সরকারের কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যেগের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসমূহ অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে এবং জাতীয় আয় ও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্নখাতে ব্যাপক উন্নতি অর্জিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বীকৃতি অর্জন করায় সারা বিশ্বের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য প্রমাণিত হয়েছে বারবার। ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে দলটি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্তেহারে প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যারা এদেশে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তাদের বিচার করা। সরকার গঠনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই বিচারের ব্যবস্থা করে। শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য বিশাল বিজয়। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচারে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে, যা দলের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সফলতা।

দুর্নীতির ধুয়ো তুলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেক জল্পনা-কল্পনা, তদন্ত আর বিশ্বমোড়লদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ আরম্ভ করার পরিকল্পনা করে সরকার। আজ সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে, দেশের অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। বিশ্বব্যাংক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তাদের ভুল স্বীকার করে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়েছে যে, পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন না করা তাদের একটি বড় মাপের ভুল ছিল! শেখ হাসিনা পেরেছেন। পারবেনই বা না কেন? তার শরীরে তো বঙ্গবন্ধুরই রক্ত! পাকিস্তানের কারাগারে যখন বঙ্গবন্ধুর জন্য কবর খোঁড়া হয় তখন তাদের তিনি মৃত্যুর তোয়াক্কা না করেই বলেছেন, ‘তোমরা আমার লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও।’

বলতে দ্বিধা নেই, শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই অদ্ভুত আঁধার থেকে বাংলাদেশ এখন আলোর পথে। অথচ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী ও হাইব্রিড ব্যক্তি। এরা কৌশলে নিজেদের জায়গা মজবুত করছে। সরকার গঠনের আগ মুহূর্তে দলের চরম ক্রান্তিকালে এই সুবিধাভোগী অংশ গা-ঢাকা দিলেও সরকার গঠনের পর থেকেই আবারও নানাভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। হায়! সবাই এখন আওয়ামী লীগ। চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। আমলা থেকে শুরু করে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী কিংবা প্রকৌশলী সবাই এখন এই প্রতিযোগিতার প্রতিযোগি। সবকিছুর পর একটিই চাওয়া, যেকোনো উপায়ে নিজেদের গায়ে আওয়ামী লীগের ‘তকমা’ লাগানো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্য আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠাদের আস্ফালনে দীর্ঘদিনের ত্যাগী এবং প্রকৃত আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকরা এখন কোণঠাসা। একই চিত্র অন্যান্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রেও বিরাজমান।

গণমাধ্যম জানান দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠেছে শতাধিক নামসর্বস্ব সংগঠন। এর মধ্যে কোনো কোনো সংগঠন নিজেদের আওয়ামী লীগের অঙ্গ কিংবা সহযোগী সংগঠন দাবি করে প্রচারণায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করছে। এসব সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ বেশ পুরাতন। দিন শেষে যা বিতর্কিত করছে আওয়ামী লীগকে।

ভুলে গেলে চলবে না আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরাতন, সর্ববৃহৎ এবং মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একমাত্র দল, যে দল গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে সমৃদ্ধ। ক্ষমতার বাইরে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম আর ক্ষমতায় আসীন হয়ে নানা উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আমাদের সমাজ-রাজনীতির এই ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। তাই সুবিধাভোগী ও হাইব্রিডদের জন্য যদি আওয়ামী লীগ দুর্বল হয় তাহলে সমাজ-রাজনীতির প্রগতির ধারা দুর্বল হবে। আর আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হলে এই ধারাও শক্তিশালী হবে। মনে রাখা জরুরিÑ আওয়ামী লীগ হেরে গেলে, হেরে যাবে বাংলাদেশ! আধুনিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সুশাসন নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের কার্যকরি উন্নয়নে আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলনাতীত। এই ধারা অব্যাহত থাকুক। সুবিধাভোগী ও হাইব্রিডদের কবল থেকে মুক্তি পাক আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগেই থাকুক আওয়ামী লীগ।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Awamileague Times
By Awamileague Times ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬ ০২:১৮
01212016_11_ALBD_CONSTITUTION

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner