৭ই মার্চের ভাষণ এখন বিশ্বসম্পদ

Awamileague Times
By Awamileague Times নভেম্বর ১৩, ২০১৭ ১৭:০০

৭ই মার্চের ভাষণ এখন বিশ্বসম্পদ

ফজলুল হক খান : যুগে যুগে বিশ্বের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, অধিকারবঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন জনাকয়েক মহাপুরুষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদেরই একজন।শাসকের রক্তচক্ষু, নির্যাতন, জেল-জুলুম এমনকি মৃত্যুকে উপেক্ষা করে তাঁরা শুধু সংগ্রামই করেননি, তাঁদের অপূর্ব বক্তৃতার দ্বারা মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। এসব মহাপুরুষের অসংখ্য কথার মধ্যে দু-একটি কথা যেমন বাণীতে রূপান্তরিত হয়েছে তেমনি অসংখ্য বক্তৃতার মধ্যে কোনো একটি বক্তৃতা ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

এসব ভাষণের মধ্যে একটি প্যাট্রিক হেনরির ‘আমাকে স্বাধীনতা দাও, নয়তো মৃত্যু। ’ ১৭৭৫ সালের ২৩ মার্চ তৎকালীন ভার্জিনিয়া রাজ্যের শাসক প্যাট্রিক হেনরি রিমেন্ডের সেন্ট জন চার্চে উপস্থিত স্থানীয় নেতা আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন ও জর্জ ওয়াশিংটন এবং সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশে ব্রিটিশ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ডাক দেন।নিগ্রোদের অধিকার আদায়ে আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন আফ্রিকান মার্কিন মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। তাঁর বিখ্যাত ভাষণ ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর একটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। ১৮৬১ সালে গৃহযুদ্ধকালে তাঁর অবদানের কারণে দ্বিখণ্ডিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় আমেরিকা। ১৮৬৩ সালের ১৮ নভেম্বর গেটিসবার্গে তিনি যে ভাষণ দেন সেটিই ঐতিহাসিক গেটিসবার্গের ভাষণ নামে খ্যাত, যা আমেরিকার জন্য এক মূল্যবান দলিল।মহাত্মা গান্ধী ১৯৪৭ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন বোম্বের গাওলিয়া ট্যাক ময়দানে ব্রিটিশদের ভারত ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। যা ভারত ছাড় বা কুইট ইন্ডিয়া বক্তৃতা নামে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে।

১৯৫৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলার বক্তৃতাটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। ছন্দময় ও কাব্যিক এই বক্তৃতায় ম্যান্ডেলা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিজেদের শক্তি সম্পর্কে সচেতনতাকে তাঁদের জন্য এক বিজয় বলে উল্লেখ করেন।

ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পৃথিবীর সাড়া জাগানো ভাষণগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বিবেচিত। ১৮ মিনিটের সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল যেমন ছন্দময় ও কাব্যিক তেমনি ছিল হৃদয়গ্রাহী ও মর্মস্পর্শী। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণটি বিশ্লেষণ করে মার্কিন ম্যাগাজিন নিউজ উইক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনৈতিক কবি’ উপাধি দিয়েছে। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো)। ফলে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ ইউনেসকোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা বাঙালি জাতির জন্য এক পরম পাওয়া। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আজ শুধু বাঙালি জাতির সম্পদ নয়, বিশ্বসম্পদ। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের শুরুতেই বলেন, ‘আজ দুঃখ ভরাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলেই জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। ’

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি ছিল মূলত স্বাধীনতার প্রস্তুতিমূলক ভাষণ। ওই ভাষণে পাল্টে গেল বাংলাদেশের দৃশ্যপট। বাংলাদেশ পরিচালিত হতে লাগল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি সশস্ত্র সংগ্রামের নির্দেশনা দিলেন এভাবে—‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে, আমি যদি হুকুম দিবার না-ও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। … প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ সত্যি বঙ্গবন্ধু সেদিন সৃষ্টি করলেন এক অনন্য ইতিহাস। সেই ইতিহাসের হাত ধরেই জন্ম নিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, একটি জাতীয় পতাকা, একটি জাতীয় সংগীত।

Awamileague Times
By Awamileague Times নভেম্বর ১৩, ২০১৭ ১৭:০০

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner