যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ: বুজলে বুজপাতা না বুজলে তেজপাতা!

Awamileague Times
By Awamileague Times অক্টোবর ৫, ২০১৯ ২২:১৫

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ: বুজলে বুজপাতা না বুজলে তেজপাতা!

শিব্বীর আহমেদ: গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাবাদী ছাড়া সবারই প্রত্যাশা একটি নুতন কমিটির। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু তণয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত এবং বহুল আকাংখিত কমিটি এখনো দেননি। তিনি জানিয়েছেন ’সময় হলেই তিনি কমিটি দেবেন’। গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ষ্পষ্ট করে বলেছেন, ’তার হাতে গড়া যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আছে। তবে সময় হলেই তিনি একটি নুতন কমিটি দেবেন।’ সাংবাদিক সম্মেলনে জননেত্রী শেখ হাসিনা এও বলেছেন, ’তাকে কাউকে চিনিয়ে দিতে হবেনা। তিনি সবাইকে চিনেন। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কান্ডারী কে হবেন তা তিনিই ঠিক করবেন।’

সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই আমি একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম ’যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি পুরাতন কমিটি’ শিরোনামে। সেখানে বলেছিলাম, জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সর্ম্বধনা (২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার ২০১৯) সভায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাদেরকে একটি ম্যাসেজ দিয়েছেন। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সেই ম্যাসেজ বর্তমান নেতাকর্মীরা বুঝতে পারলেন বলে মনে হলনা। একইদিন সাংবাদিক সম্মেলনে (২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার ২০১৯) তিনি নুতন কমিটির প্রত্যাশিত নেতাকর্মীদেরকেও একটি ম্যাসেজ দিয়েছেন। আশা করি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন নেতৃত্ব সেই ম্যাসেজটি ধারন করতে পারবেন।

২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার নিউইয়র্কে সাংবাদিক সম্মেলন শেষে যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্কের অস্থায়ী আবাসস্থল লটে নিউইয়র্ক প্যালেসে পৌঁছার সাথে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা এসে হ্যান্ডশেক করলেন বেশ খোশ মেজাজে। তাদের এই খোশ মেজাজ দেখে প্রতিভাত হল যে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন নেতৃত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ম্যাসেজটি পড়তে পারেননি।

২০১৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্কস্থ সর্ম্বধনাস্থল ’নো মোর সিদ্দিক” স্লোগানে ছিল উত্তাল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে শতশত অভিযোগ জননেত্রী শেখ হাসিনার টেবিল ভর্তী হয়েছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অভিযোগের ফাইল জননেত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে পাঠানো হয়েছে সিদ্দিকুর রহমান ও তার অনুসারিদের বিরুদ্ধে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সফররত উচ্চ পর্য্যায়ের নেতাকর্মী পদস্থ কর্মকর্তা এমনকি সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের সাথেও দফায় দফায় বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।

এক পর্য্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ’লটে প্যালেস হোটেল’ লবীতে এসে ঘোষনা দেন, ’জননেত্রী শেখ হাসিনার সর্ম্বধনা সভা নেত্রী নিজেই সভাপতিত্ব করবেন এবং একমাত্র বক্তা হিসাবে তিনিই প্রধান অতিথির ভাষন দিবেন।’

ড. আবদুস সোবহান গোলাপের এই ঘোষনায় সেদিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বস্তি নিয়ে ঘরে ফিরে যান। সবার মনেই আশা সঞ্চার হয় নুতন কমিটির ব্যাপারে। কিন্তু নেত্রীর সর্ম্বধনা সভায় ড. সিদ্দিকুর রহমান সহ বর্তমান কমিটির জায়গা না হবার সাথে সাথে ঘোষিত হয়নি প্রত্যাশিত নুতন কমিটিরও। সর্ম্বধনা সভায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ড. সিদ্দিকুর রহমান ও তার অনুসারীদেরকে মঞ্চে বসতে না দিয়ে যে ম্যাসেজটি দিলেন সেটি হল, ’যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আছে এবং থাকবে। কিন্তু এই সর্ম্বধনা সভার মধ্য দিয়ে ড. সিদ্দিকুর রহমান ও তার কমিটির এক ধরনের অলিখিত অবসান হল।’ এটি মুলত: বুঝার বিষয়।

সর্ম্বধনা সভা শেষে সবার কাছে একই প্রশ্ন কখন হবে প্রত্যাশিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের। কখন জননেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন নেতৃত্ব ঘোষনা করবেন। জল্পনা কল্পনা গিয়ে শেষ হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে। সবার ধারনা ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে নুতন নেতৃত্বের ঘোষনা দিবেন।

সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন নেতৃত্ব নিয়ে সাংবাদিক লাভলু আনসারের করা এক প্রশ্নের জবাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ’যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আমার হাতের গড়া সংঘটন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আছে এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ থাকবে। কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমি সবাইকে চিনি। সময় হলেই আমি নুতন কমিটি করে দেব।’

জননেত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষনায় যেমন হতাশ হয়েছে প্রত্যাশিত নুতন নেতৃত্ব, তেমনি খুশি হয়েছে বর্তমান নেতৃত্ব। পুরাতন নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু নুতন কমিটি দেননি তাহলে আমরা এখনো বহাল আছি। ফলে অতি উৎসাহি এই নেতাদেরকে বেশ খুশি হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে খুব দ্রুতই। কিন্তু বিষয়টি কি আসলে তাই! জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচার বুদ্ধি এবং বিবেচনার সাথে যে ম্যাসেজটি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বকে দিয়েছেন সেটি তারা অসলেই বুঝতে পারেননি। বুঝতে পারলে হয়ত আবারো তারা বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে লাফিয়ে উঠতেন না। তারা নিরবে অপেক্ষা করতেন জননেত্রী শেখ হাসিনার নুতন কমিটির ঘোষনা আসা পর্যন্ত।

২ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। মতবিনিময় সভায় তিনিও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বকে জননেত্রী শেখ হাসিনার ম্যাসেজটি বুঝবার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনা সমাবেশে সভাপতিত্ব করার সুযোগ পাননি সিদ্দিকুর রহমান। এমনকি তার কমিটির কেউই সেটি পরিচালনারও সুযোগ পাননি। এখান থেকেই তাকে বুঝতে হবে যে, তার নতুন করে কিছু করা উচিত হবে না। কোন সিটি অথবা স্টেটে সম্মেলন অথবা কমিটির প্রক্রিয়ায় না যাওয়াই তার জন্য শ্রেয় হবে। জাস্ট কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় থাকা উচিত। এ সময়ে কোন ধরনের কোন্দল বা বিরোধে লিপ্ত হওয়া সমীচিন হবে না। ফারুক খান উল্লেখ করেন, এতদসত্বেও সিদ্দিকুর রহমান যদি নতুন করে কিছু করতে চান, তাহলে তাকে পরামর্শ দেবেন বিরত থাকতে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপির মন্তব্যের পর আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব তার কর্ম পরিধি বুঝতে পারবেন এবং কেন্দ্রের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং মুহাম্মদ ফারুক খান এমপির ম্যাসেজ ও পরামর্শ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব দ্রুতই বুঝতে পারবেন আশা করতে দোষের কিছু নেই বলে মনে করছি।

বুজলে বুজপাতা, না বুজলে তেজপাতা। কথা কিন্তু কিলিয়ার।

শিব্বীর আহমেদ
লেখক সাংবাদিক
জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি, মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ
সম্পাদক, আওয়ামী লীগ টাইমস

Awamileague Times
By Awamileague Times অক্টোবর ৫, ২০১৯ ২২:১৫
01212016_11_ALBD_CONSTITUTION

  • Sorry. No data yet.
Ajax spinner